দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর ১৭তম সম্মেলনের আজ সমাপ্তি দিনে সদস্য দেশের নেতারা দক্ষিণ এশীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি (সাফটা)র পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ বছর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় আঞ্চলিক বাণিজ্য অগ্রগতির বিষয়টি প্রাধান্য পায়। যদিও সার্কভুক্ত আটটি দেশের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যে অগ্রগতির হার ৫ শতাংশেরও কম।
সার্কের দু’দিনের এ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে নেতৃবৃন্দ সার্ককে আরো গতিশীল করতে সবক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণ, সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা, দারিদ্র্য ও আয়ের অসমতা হ্রাস, পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানীতে অধিক বিনিয়োগ, জলদস্যুতা রোধ এবং সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যক্রমের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে সম্মত হন।
সমাপ্তি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ১৭তম সার্ক শীর্ষসম্মেলনের আয়োজক দেশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ এবং এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমি ওয়াই থিনলে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে অংশ নেন।
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বহস্পতিবার উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেন। সম্মেলন শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে তিনি দেশে ফিরে যান।
সার্ক শীর্ষসম্মেলনকালে চারটি চুক্তি স্বারিত হয়। এসব হল, সার্ক সীড ব্যাংক গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্রুত পদপে গ্রহণ , অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিকগনিশন অব কনফরমিটি এসেসমেন্ট এবং পণ্য ও সেবার আঞ্চলিক মান বাস্তবায়ন। তবে এবারকার সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার মূল বিষয় ছিল এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অগ্রগতির জন্য সাফটার যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়ন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আমদানি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন পণ্যের তালিকা হ্রাসসহ শুল্ক বাধা অপসারণের কথা বলেন।
সার্কের ২০ দফা ঘোষণা অনুযায়ী বাণিজ্য চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং পণ্যের মান ও শুল্ক প্রক্রিয়া অভিন্ন করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সার্ক মন্ত্রীপরিষদ প্রচেষ্টা জোরদার করবে। এছাড়া আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ ও আর্থিক মূলধনের প্রবাহ বাড়াতে একটি প্রস্তাব তৈরির লক্ষে এ অঞ্চলের অর্থমন্ত্রীগণ পুনরায় পদক্সেপ নেবেন।
এছাড়া সার্ক ঘোষণায় ২০১২ সালে মালদ্বীপে সার্ক বাণিজ্য, ভ্রমণ ও পর্যটন মেলার আয়োজন, ‘গন্তব্য দক্ষিণ এশিয়া’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আঞ্চলিক বিনিয়োগ বাড়ানো, ভারত মহাসাগরে রেল, মটর ও ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ানো, থিম্পুতে গৃহিত জলবায়ু পরিবর্তন স্টেটমেন্ট যথাসময়ে বাস্তবায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, নারী ও শিশুপাচার রোধসহ মিডিয়া দিবস উদযাপনের কথা বলা হয়।
সম্মেলনে দেড়শ’ কোটি জনগণের এ অঞ্চলের অনেক এলাকায় পর্যটন, জলদুস্যুতা, নারী ও শিশু পাচার, অভিবাসী শ্রমিক এবং তীব্র দারিদ্র্যের মতো অভিন্ন উেেদ্বগের বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল ঢাকার উদ্দেশ্যে মালদ্বীপ ত্যাগ করবেন। সার্কের অন্যান্য নেতাও একইদিনে নিজ নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।