ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪ ব্যাংক। সরকারের চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো ঋণ-অগ্রিম, আমানত সংগ্রহ, আমদানি-রপ্তানিতে অর্থায়ন ও খেলাপিঋণ আদায়ে বিগত বছরের তুলনায় বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এমনকি একসময় লোকসানি ব্যাংক হিসাবে পরিচিত এসব ব্যাংকগুলো ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকিং করেও এখন উচ্চ পরিচালন মুনাফা করেছে।
বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং পরিচালন মুনাফার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা। আগের বছরে এ ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৬৪৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৭ শতাংশ টাকা। বিদায়ী বছর জনতা ব্যাংক লিমিটেড এক হাজার ২০২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০১০ সালে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকও মুনাফা করেছে প্রায় এক হাজার ৮০ কোটি টাকা। অপরদিকে সদ্য স্বাভাবিক ব্যাংকিংয়ের ধারায় ফিরে আসা রূপালী ব্যাংক লিমিটেডও বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ২৫০ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা হচ্ছে ট্যাঙ্-পূর্ব মুনাফা। এ থেকে ট্যাঙ্ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বাদ দিয়ে নিট মুনাফা বের করা হয়। অপরদিকে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১০ সালে সোনালী ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১০ সালে জনতা ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী বছরে যা ছিল ১৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অপরদিকে সোনালী ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১২ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৩৬ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংকের ৩৪ দশমিক ৬০। রূপালী ব্যাংকও ঋণ-আমানতের ক্ষেত্রে বেশ সফল হয়েছে বলে ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, জনতা ব্যাংক বিদায়ী বছরে আমদানিতে অর্থায়ন করেছে প্রায় ১৮ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক আমদানি বাণিজ্যে অর্থায়ন করেছে ১৬ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১১৭ শতাংশ বেশি। বিদায়ী বছরে রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাংকটি অর্থায়ন করেছে ছয় হাজার ৪৪২ কোটি টাকা, যা ২০০৯ সালের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সফলতার কারণ সম্পর্কে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। পুরনো কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন, যা ব্যাংকটির মুনাফার ওপর প্রভাব ফেলেছে।’