দেশে পাঠাগারের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সমাজের সম্পদশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “এখন আর্থিকভাবে অনেকে শক্তিশালী। যারা আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল- তাদেরকে নিজ গ্রামে, উপজেলা ও জেলায় লাইব্রেরি স্থাপন করতে হবে।”

বুধবার গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের জাতীয় সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন করে লোকসাহিত্যের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মূল্যবান উপাদানগুলো রক্ষণাবেক্ষণে তাদের (গ্রন্থাগার পেশাজীবী) কার্যকর ভূমিকা রাখারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নিজস্ব ও এদেশে আগমনকারী বিভিন্ন জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের যে অমূল্য সাহিত্য উপকরণ রয়েছে, তা সংরক্ষণে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে।”

আধুনিক বিশ্বে তথ্যকে শক্তি ও উন্নতির চাবিকাঠি হিসাবে চিহ্নিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তথ্য পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। আর তথ্য আধুনিক জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রধান উপকরণ।

তথ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গ্রন্থাগারিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দেশের গ্রন্থাগারগুলোর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রন্থাগারগুলো ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে জ্ঞানপিপাসুরা আরো সহজে তাদের আগ্রহ মেটাতে পারবেন।

“আমরা গ্রন্থাগার অবকাঠামোরও ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সব জেলায় সরকারি গণগ্রন্থাগারের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫ জেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও গণগ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।”

গবেষণার সুবিধার্থে এবং গ্রন্থাগারিকদের পেশাগত উন্নয়নে জাতীয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়নের উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জ্ঞানের মিলনস্থল এ সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠানের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করছেন গ্রন্থাগার পেশাজীবীরা।”

গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজের আনন্দের কথাও প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।

“গ্রন্থাগার হচ্ছে লেখক, পুস্তক ও পাঠকের সম্মিলনস্থল। সভ্যতার দর্পণ। একটি দেশের সার্বিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আগের মেয়াদে পাড়ায়-মহল্লায় পাঠাগার গড়ে তোলা হলেও পরবর্তীতে সরকারের অবহেলায় তা আর কার্যকর থাকেনি।

“আমরা গ্রন্থাগার নীতি প্রণয়ন করেছিলাম। কিন্তু জোট সরকারের সময় এটি বাস্তবায়িত হয়নি”

বর্তমান সরকার গ্রন্থাগার নীতি যুগোপযোগীভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

দেশের সব ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো এবং শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “গ্রাম-শহর নির্বিশেষে দেশের জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইডমুক্ত করা হচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে গ্রন্থাগার পেশাজীবীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে পাঠকরা অনলাইন সেবা পাবেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের তথ্য সেবা দেয়ার জন্য ব্লাইন্ড সেন্টার খোলা হয়েছে।”

দেশের সব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও শেখ হাসিনা জানান।

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলারা বেগমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। সংগঠনের গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক নাফিজ জামান শুভ গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল মাজেদ। অন্যদের মধ্যে সমিতির মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যের পর কাজী মাজেদ প্রধানমন্ত্রী এবং সংস্কৃতি মন্ত্রীকে সমিতির পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।