অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের মুখে সিরিজ জয়ের তৃপ্তির হাসি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই তো তার দল আরব আমিরাতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। আক্ষরিক অর্থেই সিরিজ লড়াই হয়েছে সমানে সমান। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৪ উইকেটে। পরের ম্যাচেই পাকিস্তান প্রতিশোধ নেয় ৭ উইকেটে জিতে। তাই মঙ্গলবার রাতে শারজাতে তৃতীয় ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী। তাতে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে সিরিজ জিতে কুল অ্যান্ড কুল কাপ নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৪৪ রান করেছিল পাকিস্তান। জবাবে ৪৭ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫০ রান তুলে ম্যাচ জেতে ক্লার্কের দল। এর ফলে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে চার নম্বরেই রইল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের জায়গা ছয় নম্বরে। গত দশ বছরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কোনো ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। এবারও সম্ভাবনা জাগিয়ে ব্যর্থ হল মিসবাহ-উল হকের দল।
জয়ের জন্য ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার (২১) ও ডেভিড হাসির (৪৩) ৪৪ রানের জুটির সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালোই হয়েছিল। কিন্তু দলের ১০৫ রানে ডেভিড হাসির বিদায়ের পর জর্জ বেইলিও (১) দ্রুত সাজঘরে ফিরলে ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জেতাতে বড় ভূমিকা নেন মাইক হাসি এবং অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাইক হাসি খেলে যান ৬৫ রানের একটি দামি ইনিংস। যাতে ছিল এক ছক্কা এবং সাত বাউন্ডারি। আর ম্যাক্সওয়েল তিন ছক্কা এবং চার বাউন্ডারিতে হার না মানা ৫৬ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সাঈদ আজমলও অজিদের জয়ের পথে বাধা হতে পারেননি।
এর আগে নাসির জামশেদের (৪৮) সঙ্গে মোহাম্মদ হাফিজের (৭৮) ১২৯ রানের উদ্বোধনী জুটির সৌজন্যে পাকিস্তানের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল। মিচেল জনসনের করা ২৭তম ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাথু ওয়েডকে ক্যাচ দিয়ে জামশেদ সাজঘরে ফিরলে প্রথম সাফল্য পায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তারপরই পাকিস্তানের রান বেলুন অদ্ভুতভাবে চুপসে যায়। রানের গতি বাড়াতে আসাদ শফিকের বদলে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা শহিদ আফ্রিদির (৭) দ্রুত বিদায় দলকে উল্টো বিপদে ফেলে। ৩৩তম ওভারে সপ্তম বোলার হিসেবে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলে হাফিজকে (৭৮) বিদায় করে পাকিস্তানকে আরেকটা ধাক্কা দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ক্লার্ক।
তারপর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের সেই পুরনো চেহারা। ২৮ রান তুলতেই নেই দুই উইকেট। চতুর্থ উইকেটে শফিকের (২৭) সঙ্গে অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের (২৫) ৩০ রানের জুটি ভাঙ্গা মিচেল স্টার্ক ওই ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করেন উমর আকমলকে। ষষ্ঠ উইকেটে আজহার আলির সঙ্গে মিসবাহর ৩৫ রানের সম্ভাবনাময় জুটি ভাঙ্গা স্টার্ক ৪৭তম ওভারেও নেন দুই উইকেট। সেই ওভারের প্রথম বলে মিসবাহ (২৫) ও পঞ্চম বলে কামরান আকমলকে (২) সাজঘরের পথ দেখান তিনি। সেখান থেকে পাকিস্তানকে আড়াইশ’র কাছাকাছি পর্যন্ত নিয়ে যান আজহার (২৭*) ও আবদুর রেহমান (১২*)। ৫১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে স্টার্কই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার। এ ছাড়া মিচেল জনসন ২ উইকেট নেন ৩৩ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ২৪৪/৭, ৫০ ওভার (হাফিজ ৭৮, জামশেদ ৪৮; স্টার্ক ৪/৫১)।
অস্ট্রেলিয়া : ২৫০/৭, ৪৭ ওভার (ডেভিড হাসি ৪৩, মাইক হাসি ৬৫, ম্যাক্সওয়েল ৫৬*; আজমল ৩/৩৭)। ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী। সিরিজ জয়ী ২-১ ব্যবধানে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাইক হাসি। ম্যান অব দ্য সিরিজ : মিচেল স্টার্ক।