সমুদ্রসীমা নির্ধারণে সমদূরত্ব পদ্ধতি বাদ এবং দুশ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপান নির্ধারণে জাতিসংঘের সমুদ্র বিষয়ক ট্রাইবুনালে যুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা নিয়ে জার্মানির হামবুর্গে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সীতে   এ যুক্তি তুলে ধরা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস ইইজেড ও মহীসোপান নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি তুলে ধরে তার বক্তব্য শুরু করেন। ইউনাইটেড ন্যাশন কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সীর (ইউএনসিএলওএস) প্রাসঙ্গিক আইনগুলো তুলে ধরে বিশেষ কোনো পদ্ধতিকে গুরুত্ব না দিয়ে সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ওপর জোর দেন তিনি। সমুদ্রসীমা বিরোধ সংক্রান্ত সামপ্রতিক দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন অধ্যাপক স্যান্ডস, যেখানে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বিকল্প পদ্ধতি ‘কৌণিক বিভাজন ব্যবহৃত হয়েছিল।
সমপ্রতি নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাস এবং গিনি ও গিনি বিসাউয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় ওই পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রতি আহ্বান জানান স্যান্ডস। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গোপসাগরে সমদূরত্বের ভিত্তিতে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হলে কেন তা সমতামূলক হবে না তার পক্ষে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরেন বাংলাদেশকে আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফোলি হগের ল্যারি মার্টিন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর অবতলমুখী হওয়ায় সমদূরত্ব পদ্ধতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ হলে তাতে যে অসমতা দেখা দেবে তা তুলে ধরেন তিনি। মার্টিন বলেন, সাগরের মুখে বাংলাদেশের একটি দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা রয়েছে; এ কারণে প্রতিবেশি দেশগুলোর অবশিষ্ট অংশ নয়, বরং বাংলাদেশ সমতাভিত্তিক সমুদ্রসীমার দাবিদার। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর সমঝোতার ভিত্তিতে আইটিএলওএসে এই মামলা করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ১ জুলাই মিয়ানমার এবং ওই বছর ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নিজেদের দাবির পক্ষে নথিপত্র জমা দেয়। চলতি বছরের ১ মার্চ বাংলাদেশ মিয়ানমারের দাবির ব্যাপারে এবং মিয়ানমার ১ জুলাই বাংলাদেশের দাবি বিষয়ে আপত্তিপত্র জমা দেয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে মহীসোপানে মালিকানা নিয়ে জাতিসংঘে অবস্থানপত্র জমা দেয় বাংলাদেশ। এতে সাগরের সীমানা নির্ধারণের সূচনা বিন্দু থেকে ৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকায় বাংলাদেশের মালিকানা রয়েছে বলে সেখানে দাবি করা হয়। ওই অবস্থানপত্রে বলা হয়, মহীসোপানে বাংলাদেশের মালিকানা সাগরের ২১ লাখ ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার সমান। কিন্তু গত ৩১ মার্চ মিয়ানমার এবং ২০ জুন ভারত বাংলাদেশের এই দাবির বিষয়ে জাতিসংঘে আপত্তিপত্র দেয়।