আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পাশাপাশি বন্দরসংলগ্ন এলাকায় আইটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। রাজধানীর ওপর জনসংখ্যা ও যানজটের চাপ কমাতে দোহারে তৈরি করা হবে নতুন স্যাটেলাইট শহর।

গ্রামীণ আবহেই এ উপশহর গড়ে উঠবে। আইটি ভিলেজে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ছাড়াও তৈরি করা হবে মোবাইল ফোনসেট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান কারো মনে দুঃখ না দিয়ে এবং আবাসিক এলাকা দখল না করে এমন স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দেওয়ার কথা বলেছেন। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। গতকাল শনিবার ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর পর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল প্রতিমন্ত্রী দোহার পৌরসভার গ্যারেজ কাম রেসিডেনশিয়াল বিল্ডিং নির্মাণ এবং পৌর ভবন সম্প্রসারণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বেগম আয়েশা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ছাত্রীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ, জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ, জয়পাড়া কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং কলেজ মাঠে দোহার উপজেলা সমিতি আয়োজিত ২০১০ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব বক্তব্য দেন। এ ছাড়া আড়িয়াল বিল এলাকায় বিমানবন্দর স্থাপন প্রসঙ্গে স্থানীয় কাঁঠালিকাটায় তাঁকে দেওয়া গণসংবর্ধনা এবং শাইনপুকুর এলাকায় বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য দেন। এসব অনুষ্ঠানে তাঁর সহধর্মিণী হাসিনা মান্নান, স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী অংশ নেন। সকাল সোয়া ১১টায় প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য দোহার পৌরসভার গ্যারেজ কাম রেসিডেনশিয়াল বিল্ডিং নির্মাণ এবং পৌর ভবন সম্প্রসারণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কারো বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হবে না। যদি কোনো জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে মালিককে জমির বর্তমান মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি দাম দেওয়া হবে। বিমানবন্দর হলে এলাকার ১০ লাখ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে গ্যাস ও বিদ্যুতের সুবিধা বাড়বে। প্রতি ইঞ্চি জমি হীরক খণ্ডে পরিণত হবে। বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানকার ৯৫ ভাগ মানুষ বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে। আর যারা দেশের সুখ-সমৃদ্ধি চায় না, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চায়, দেশের উন্নয়নকে প্রতিহত করতে চায় এবং একই সঙ্গে যারা আড়িয়াল বিলের খাসজমি কোনো কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে ভোগদখল করছে, তারাই এ বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করছে। তারা কুণ্ডু রাজার জমি অবৈধভাবে দখল করে আসছে। পূর্ত প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিমানবন্দরের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা এর বিরোধিতা করছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বিমানবন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। এরপর প্রতিমন্ত্রী বেগম আয়েশা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় তিনি ছাত্রীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করেন। পরে একইভাবে জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও তিনি নতুন বই বিতরণ এবং জয়পাড়া কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি কলেজ মাঠে দোহার উপজেলা সমিতি আয়োজিত ২০১০ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া দুপুরে কাঁঠালিকাটায় প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া হয় গণসংবর্ধনা। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কাঁঠালিকাটা, খাল পাড় ও লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামবাসীর পক্ষে মাসুম মিয়া। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা এ এলাকার উন্নয়ন করতে চাই।’ তিনি বলেন, এলাকার মানুষ বিমানবন্দর চায়। কিন্তু বিলের খাসজমি দখলকারীদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এসএ বা সিএস খতিয়ান এ দখলদারদের কাছে নেই। দখলকারীরা ২০০ লোক নিয়ে মিছিল করে বাধা দিচ্ছে। এ সময় বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মিণী হাসিনা মান্নান, মো. মাসুম মিয়াসহ অন্য নেতারা। হাসিনা মান্নান বলেন, বিরোধীরা আওয়ামী লীগের উন্নয়নের বিরোধিতা করছে। সন্ধ্যায় শাইনপুকুর এলাকায় বিজয় দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন উদয়ন প্রিপারেটরি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাকসুদুর রহমান ইমাম। বক্তব্য দেন দোহার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলী আহসান খোকন, অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম খান প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া।