আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের টাকা নেওয়ার বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এ ক্ষেত্রে আদালত তাকে নোটিশ দিলে তিনি আদালতে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীন এ মন্তব্য রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিচারকদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতির টাকা নেওয়ার সঙ্গে আদালতের কোনো মামলার রায়ের বিষয় জড়িত ছিল না। অথচ খালেদা জিয়া আদালতের দেওয়া রায়ের সঙ্গে বিচারককে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তিনি জানান, এখনও আইন মন্ত্রণালয়ে একজন বিচারকের ২৭ লাখ টাকার একটি চিকিৎসা ভাতার আবেদন রয়েছে। অতীতে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আরও অনেক বিচারপতি চিকিৎসার জন্য টাকা নিয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া খালেদা জিয়ার এ ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এই বক্তব্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতকে হেয় করেছে এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিরা অসুস্থ হলে নিয়মানুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে তারা চিকিৎসা ভাতা গ্রহণ করে থাকেন।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৩১ আগস্ট অভিযোগ করে বলেন, প্রধান বিচারপতি থাকাকালে খায়রুল হক টাকার বিনিময়ে ওই রায় দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ইতিমধ্যে খালেদা জিয়াকে ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো বক্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননা হয়ে গেলে তা প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। এ জন্য তিনি ভুল স্বীকার করতে পারেন। আর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আদালত দেখবেন। তাদের নিজস্ব অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে আদালত তাকে নোটিশ দিলে তিনি আদালতে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালত চাইলে তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। আদালতকে জড়িয়ে এমন মন্তব্য করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের সময়ও খালেদা জিয়া বিচারপতিদের সহায়তা দিয়েছিলেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের সপক্ষে আজ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের এ সংগঠনটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সমালোচনা করে আসছিল অনেক আগে থেকেই। এমনকি তারা বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিদায়ী অনুষ্ঠানও বর্জন করেছিলেন।
এদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিচারকদের চিকিৎসা ভাতার রীতি অনুযায়ী ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যারা টাকা নিয়েছেন তাদের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, বিচারপতিরা চিকিৎসা র জন্য দুই কোটি টাকার বেশি আর্থিক অনুদান নিয়েছেন। এতে কমিটি খালেদার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনাও করে।
আইনি সহায়তা দিতে আহ্বান : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক কর্মশালায় সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দিতে বিচারক ও আইনজীবীদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জনসচেতনতা ও আন্তরিকতার অভাবে সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পরও অর্থ অব্যবহৃত থাকছে। এটা প্রত্যাশিত নয়।