দেশে উত্ত্যক্তের ঘটনা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। উত্ত্যক্তকারীরা এবার শুধু উত্ত্যক্তই নয়, বিভিন্ন কৌশলে কিশোরী-নারীদের ধর্ষণও করছে। গত বছরের শেষে এবং নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ব্যাপারে নারীরা যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্ষণ চিত্র ভিডিওতে ধারণ করে তা বাজারজাত করার হুমকি দিচ্ছে। কখনোবা নৃশংসভাবে তাদের হত্যার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্যে, গত ডিসেম্বরে সারা দেশে ৩৯ নারী উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। এ সময় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নিহত হন ২২ জন। বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এ মাসে আত্মহত্যা করেন ১৫ নারী ও কিশোরী। এছাড়া বখাটে ও উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সহিংসতায় ডিসেম্বরে দেশে ১৭৩ জন আহত হন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরা হল। রংপুর কারমাইকেল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র তাসকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কলেজের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ২৮ ডিসেম্বর তাসকির শহরের খামারপাড় এলাকায় শাকিব টাওয়ার নামক ছাত্রী হোস্টেলে বোরকা পরে ঢুকে সেই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। নির্যাতিত ছাত্রীর বান্ধবী দুলালী সেই ছাত্রীর রুমে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। দুলালীর সহযোগিতায় ধর্ষক ধর্ষণ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে এবং ঘটনাটি কাউকে জানালে ভিডিও চিত্রটি বাজারজাত করার হুমকি দেয়। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ৩১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে ছানাপাড়া এলাকার বখাটেরা। চট্টগ্রামে ২ জানুয়ারি রাতে খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায় চার বখাটে কর্তৃক এক কিশোরী মতিঝর্ণা এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। বখাটেরা নির্যাতন করেই থামেনি। পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দিলে কিশোরীটি মারাত্মক আহত হয়। ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে বিষুদিয়া গ্রামে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে এলাকার বখাটে যুবক সুব্রত দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এতে তার পরিবার মেয়েটিকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ৩০ ডিসেম্বর পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরলে বখাটে সুব্রত তাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা সইতে না পেরে কিশোরীটি তার মামার বাড়িতে ফিরে বিষপানে আত্মহত্যা করে। উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম বলেন, তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে একটি অস্থির সমাজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। তারা বাণিজ্যনির্ভর একটি সমাজ কাঠামোয় শিশুসুলভ আচরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মোবাইল-ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে অল্প বয়স থেকে তরুণ প্রজন্ম যৌন আচরণে প্রলুব্ধ হচ্ছে। ফলে তারা সুস্থ বিনোদন থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এতে করে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা জন্ম নিচ্ছে এবং বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উচ্ছৃক্সখল যুবকরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাকে বেছে নিচ্ছে। সর্বোপরি বিদ্যমান অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডবিহীন পরিবেশে নিরাপত্তার অভাবে উত্ত্যক্তের শিকার নারী ও কিশোরীরা ক্রমশ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী মেয়েদের জন্য সরকারিভাবে সোস্যাল কাউন্সেলিং ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন। পাশাপাশি মেয়েদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।