বাংলাদেশের যুব সমাজের ওপর আচরণগত বেইজ লাইন সার্ভে শীর্ষক গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বর্তমানে বিবাহবহির্ভূত ও বিবাহপূর্ব অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পরিমাণ ৩ গুণ বেশি।
বর্তমানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনকেই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ২ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে ওবায়দুল কাদের তার স্ত্রী রেহানা বেগমের ছেলেবন্ধু লাভলুর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। তাছাড়া নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে রাশেদা বেগম নামের এক নারীর স্বামী ও ফুফাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। দুলাল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগমকে শুকুর আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন রাশেদার ফুফাতো ভাই শামসুল ইসলাম। এ ঘটনার কয়েক দিন পর শামসুল ইসলাম নিখোঁজ হন। ২ জানুয়ারি রাশেদা বেগমের বাড়িসংলগ্ন বড়াল নদীতে শামসুল ইসলামের বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাশেদার স্বামী দুলাল হোসেনকেও থানায় নিয়ে প্রশ্ন করে ছেড়ে দেন। এর ফলে অপমানিত হয়ে দুলাল হোসেন ২ জানুয়ারি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এদিকে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্লবী এলাকায় আরিফ হোসেন নামের ১ পোশাকশ্রমিককে তার স্ত্রী আনোয়ারা আত্মীয় ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত করে ঘর থেকে বের করে দেন। আরিফ আনোয়ারাকে ৫ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। আনোয়ারার আগের সংসারে দুই এবং আরিফ হোসেনের সংসারে এক সন্তান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, মূলত যুব সমাজের মধ্যে জীবনমুখী শিক্ষার অভাব ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণের কারণে দেশে পরকীয়ার ঘটনা বাড়ছে। এর শিকার হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। ড. আমান বলেন, আগামী এক দশকের মধ্যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতাবিষয়ক শিক্ষা, গণমাধ্যমে সুষ্ঠু প্রচারযোগ্য অনুষ্ঠান ও পারিবারিক মূল্যবোধ তৈরির ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় পাশ্চাত্যের মতো আমাদের দেশেও পারিবারিক সম্পর্কে ভাঙন ধরবে। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান পরকীয়ার ঘটনাগুলোকে ‘এক্সট্রা ম্যারেটিয়াল অ্যাফেয়ার্স’ নামে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এ সম্পর্কগুলোতে একজন ব্যক্তি মানসিক সম্পর্কের তুলনায় আর্থিক সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দেন। সাধারণত অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের জন্য বা অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকেন এবং কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে তারা হিংসার বশবর্তী হয়ে হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।